এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবে জনপ্রিয় তেল এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। স্বাস্থ্য সচেতন প্রতিটি মানুষের রোজকার ডায়েটের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলও অলিভ থেকে তৈরি তেল। এটি মূলত অলিভ অয়েল(olive oil) এর প্রিমিয়াম সংস্করণ। এর রং হালকা হলুদ থেকে উজ্জ্বল সবুজ হয়ে থাকে। এতে এসিডিটর পরিমান একদম নেই বললেই চলে,মাত্র ১% এরও কম।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর পুষ্টি গুন
কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে
কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। তাই দেহে এর পরিমান যতটা কমিয়ে রাখা যায় ততই মঙ্গল। হার্বার্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর গবেষকদের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে, অলিভ অয়েলে উপস্থিত প্রায় ৪০ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘এল ডি এল’ বা খারাপ কোলেস্টেলের মাত্রা কমায় এবং সেই সাথে ‘এইচ ডি এল’ উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে । ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমে আসে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রক
বিশেষজ্ঞরা ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েটে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল যোগ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই তেলের পুষ্টিকর উপাদান ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে, যে কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে।
ওজন হ্রাস করে
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর ফ্যাটি এসিড আপনার ওজন হ্রাসের লড়াইয়ে সঙ্গী হতে পারে। হার্বার্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর গবেষনায় প্রমানিত হয় এটি। মূলত এর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন সকালে উঠে লেবু পানির সাথে এক কাপ অলিভ অয়েল খেলে ক্ষধা কমে ও ওজন হ্রাস হয়।
হজম সমস্যা সমাধান
গ্যাসটিক বা বদহজমের মত সমস্যা ইদানিং কালে সাধারণ হয়ে দড়িয়েছে। অলিভ অয়েলে উপস্থিত মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট-এর প্রভাবে গ্যাস-অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া তো যায় ই সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের প্রকোপও কমে।
ইমিউনিটি বাড়ায়
অলিভ অয়েলের হাজারো গুন। এটি দেহের বিভিন্ন সমস্যার সাথে মোকাবেলা করার শক্তি যোগায়। গবেষণার তথ্যানুসারে, অলিভ অয়েলে উপস্থিত পলিফেনল কোষের ক্ষমতা বাড়ায়। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়া আপনার দেহকে রোগের বিরুদ্ধে আরো শক্তিশালী করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধী
ক্যান্সারে মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারন এর সঠিক প্রতিষেধক এখনো আবিস্কৃত হয়নি। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস মুক্তি দিতে পারে এই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এই মরণঘাতী ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই তেলটিতে মজুত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার সেলগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। ছোট-বড় ১৯টি গবেষণায় দেখা গেছে, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষনা অনুসারে, অলিভ অয়েলে বিদ্যমান উপাদানসমূহ কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
এই অলিভ অয়েল রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটও রয়েছে এতে। যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
বিষন্নতা দূর করে
অলিভ অয়েল শরীরে সিরোটনিন নামক হরমোনের ক্ষরণকে ত্বরান্বিত করে, যে কারণে ডিপ্রেশনের প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়
এতে উপস্থিত ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ব্রেনের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানুসারে, আলঝাইমার্স এর ঝুঁকি কমাতে পারে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল।
কানের সমস্যা সমাধান
যাদের কানের সমস্যা তাদের জন্য অলিভ অয়েল বিশেষ উপকার করে থাকে। কানের অনেক সমস্যার সমাধান রয়েছে এই তেলে।কান চুলকানি এবং গন্ধ হওয়া এমনসব সমস্যা সমাধানে কটন বারে অলিভ অয়েল লাগিয়ে সতর্কতার সাথে কানের মধ্যে দিলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
নাক ডাকার নিরাময়
নাক ডাকা বন্ধ করতে অলিভ অয়েল কার্যকর ভূমিকা পালন করে । এটি আপনার গলার পেশীকে পিচ্ছিল রাখে ফলে নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যায়। তাই যারা নাক ডাকার মত সমস্যা নিয়ে ঘুরছেন তারা অবশ্যই ঘুমানোর আগে ১চামচ অলিভ অয়েল খেতে ভুলবেন না।
সৌন্দর্যচর্চায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
ঠোঁটের যত্নে -অনেক সময় কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের কারনে ঠোঁট স্বাভাবিক কোমলতা হারায়। আবার আবহাওয়ার কারনেও ঠোঁট রুক্ষ হয়ে যায়। এই সমস্যা থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়ার জন্য অলিভ অয়েলের বিকল্প নেই।
মেকআপ রিমুভার– যাদের সেনসিটিভ ত্বক তাদের জন্য মেক-আপ তোলা একটু কঠিন। কটন প্যাডে অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিশ্চিন্তেই মেকআপ তুলে ফেলা যায় কোনরূপ নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াই।
ময়েশচারাইজার– প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে অলিভ অয়েল। এতে আছে লিনোলিক এসিড, যা পানি বাষ্প হতে দেয়না। অলিভ অয়েল স্কিনকে নরম ও কমল রাখে।
সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা
অভিল অয়েলে মজুত ভিটামিন এ, ই ও ৩ রকমের এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা আপানাকে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। সানটেন থেকে বাঁচাবে জন্য এই অলিভ অয়েল।
ব্রণ প্রতিরোধক
ব্রণের সমস্যায় তেলের ব্যবহার কিছুটা উদ্ভট হলেও ব্রণ প্রতিরোধে ভার্জিন অলিভ অয়েলের সুনাম অনেক আগ থেকে।
চুলের যত্নে
চুল পড়া কমায়– এই তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে যা চুল পড়া বন্ধ করে । এটিতে ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, সালফার, ক্যালসিয়াম এবং বি ভিটামিনগুলির মতো অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাছাড়া এটি ঘন এবং লম্বা চুল পেতে সহায়তা করে।
ফ্রিজি চুল – অনেক সময় ময়েশ্চারের অভাবে চুল ফ্রিজি হয়ে যায়। এই অবস্থায় হালকা অলিভ অয়েল লাগিয়ে আঁচড়ে নিলেই সমস্যা সমাধান। তেলটি চুলে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে বলে ফ্রিজিনেস কেটে যায়।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার – সাইনি চুল পাওয়ার কথা ভাবছেন অথচ অলিভ অয়েল ব্যবহার করেননি তাতো হয় না। অলিভ অয়েল চুলে ডিপ কন্ডিশনারের কাজ করে।
খুশকি থেকে মুক্তি – বৈশ্বিক উষ্ণতায় আবহাওয়ার রদবদলে ত্বকের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তন্মধ্যে একটি খুশকি, একটি পরিচিত রোগ। এর থেকে নিস্তার পেতে অলিভ অয়েলের সাথে সামান্য লেবুর রস মিলিয়ে স্ক্যাল্পে মেসেজ করলে সুফল পাবেন।