সূর্যমুখী ফুল
সূর্যমুখী ফুল এর রূপ ও সূর্যমুখী বীজ এর গুন দুই দিকেই সে অতুলনীয়। সূর্যমুখীর তেলের গুন জানলেও অনেকেই সূর্যমুখীর বীজের উপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ রুপে জানি না।
তাই আজকে আমরা জানবো রোজকার ডায়েটে ক্ষুদ্র এই বীজটি সংযুক্ত করলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কি অভাবনীয় পরিবর্তন আনতে পারে।
পুষ্টিমান
অনন্য সুন্দর একটি ফুল সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর ক্ষুদ্র বীজগুলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান। এতে মজুত আছে 20% প্রোটিন, 35-42% তেল এবং 31% অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড।
এছাড়া ভিটামিন হিসেবে রয়েছে এ, বি 3, বি 5, বি 6, ই, ফোলেট। তামা, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম এর মত খনিজ উপাদান, ডায়েটি ফাইবার আর প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (লিনোলিক অ্যাসিড, ওলাইক অ্যাসিড) পাওয়া যাবে এই বীজটিতে।
এগুলিতে ফ্লেভোনয়েডস এবং ফেনলিক অ্যাসিডের মতো প্রচুর উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে যা এর শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
সূর্যমুখী ফুল এবং বীজের উপকারীতা
উচ্চ পুষ্টিগুনসম্পন্ন এই বীজটি নানানভাবে আমাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। চলুন জেনে নেয়া যাক এর বিস্ময়কর ক্ষমতা –
সূর্যমুখী বীজ হজমে সহায়তা করে
ভোজনরসিক বাঙালির প্রায়শই হজমের মত সমস্যায় ভুগতে হয়। সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য তো আছেই। নিয়মিত সূর্যমুখীর বীজ গ্রহন আপনাকে এমনসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিবে। কারন এতে আছে উন্নত ডায়েটারি ফাইবার যা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে সূর্যমুখী ফুল
সূর্যমুখী ফুল হৃদরোগ – এক আতংকের নাম, যা মূহুর্তেই কেড়ে নেয় প্রান। উচ্চ রক্তচাপের কারনে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারন।
সূর্যমুখীর বীজের উপাদান ম্যাগনেসিয়াম আপনার রক্তচাপ কমিয়ে রক্তনালীকে শিথিল রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড বিশেষ করে লিনোলিক এসিড নিম্ন রক্তচাপে অবদান রাখে। পাশাপাশি এটি রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায়।
সূর্যমুখী বীজ রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস
সূর্যমুখীর বীজ টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর জন্য সবচাইতে বেশি স্বাস্থ্যকর ও কার্যকর। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। গবেষণার তথ্যানুসারে, ডায়েটের অংশ হিসেবে যারা প্রতিদিন ১ আউন্স (৩০গ্রাম) সূর্যমুখীর বীজ খেয়ে থাকেন তাদের রক্তে শর্করার প্রায় ১০% হ্রাস পায়।
সূর্যমুখী ফুল হাড় মজবুত এবং গঠনে ভূমিকা রাখে
সূর্যমুখী ফুল ত্রিশ উর্দ্ধ হলেই দেখা যায় হাড় ক্ষয় বা জয়েন্টে নানান সমস্যা। এমন সমস্যায় ভূগে থাকলে আপনাকে সাহা্য্য করবে সূর্যমুখী বীজ। কারন এতে উচ্চমানের ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা আপনার হাড়ের কাঠামো শক্তিশালী করে তোলে, জয়েন্টে সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
এন্টি–ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব
এতে বিদ্যমান ভিটামিন ই আপনার দেহের প্রদাহজনিত রোগের জন্য কাজ করে। ফ্লাভিনয়েডসও শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ওজন হ্রাসে সূর্যমুখীর বীজ
ওজন হ্রাস বরাবরই এক দীর্ঘ যাত্রা। আপনার এ যাত্রা কিছুটা সহজ করে দিবে এ ছোট বীজটি। এর পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট আপনার ওজন কমানোর ডায়েটে একটি বিশেষ অংশ হতে পারে। এর ভিটামিন বি এবং ই ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে।এটি যেমন পুষ্টিকর তেমন দীর্ঘ সময় আপনার পেটকে পরিপূর্ণ রাখে।
সূর্যমুখী ফুল মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
বর্তমানে মানসিক সমস্যায় ভোগে অনেকই। বিশেষ করে আমাদের তরূন সমাজ। তবে এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ। প্রতিযোগিতার এ যুগে হরেক রকম কারনে মানসিক চাপ, উদ্বেগে ভুগতে হচ্ছে প্রতি নিয়ত।
সূর্যমুখী ফুল এ রয়েছে ট্রিপটোফেন নামক এ্যামিনো এসিড যা শরীরে সেরোটোনিন রিলিজ করে। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে এছাড়াও হতাশা ও মানসিক চাপ কমায়। ফলে অ্যাংজাইটি এ্যাটকের মত ভয়াবহ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মেলে।
এন্টি এজিং হিসেবে সূর্যমুখী ফুল
সূর্যমুখীর বীজ প্রচুর পরিমান ভিটামিন ই পাওয়া যায়। যা আপনার ত্বকের এজিং প্রসেসকে ধীর করতে সহায়তা করে। এছাড়া রেডিকাল ক্ষতি, সূর্য রশ্মি এবং বিভিন্ন ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে।
এর বীজে উপস্থিত কপার মেলানিন তৈরি করে। যা ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষা দেয়। তাই দৈনিক খাবারের সাথে ক্ষুদ্র এই সদস্যটিকে যোগ করতে ভুলবেন না।
ত্বক জীবাণুমুক্ত করে
সারাদিনের ব্যস্ততায় অনেকেই ত্বকের যত্নের দিকে খেয়াল রাখে না। ফলস্বরূপ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নানা ভাবে ক্ষতি হয় ত্বকের। তবে আপনার রোজকার খাবারে যদি থাকে সূর্যমুখীর বীজ তবে আর দুশ্চিন্তা নয়। কারন এর প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডের রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। যা আপনাকে বিভিন্ন রোগ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিবে।
চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সূর্যমুখী ফুল
রুক্ষ চুলের সমস্যা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। তাই চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য সূর্যমুখী ফুল এবং বীজের বিকল্প আর কি হতে পারে। এর ওমেগা৬ চুলের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করে । চুলকে কোমল আর প্রানোজ্জ্বল করে তুলে।
নতুন চুল না গজানোর সমস্যা কম বেশি সকলেরই আছে। এর একটি প্রধান কারন হতে পারে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা। সূর্যমুখী বীজে মজুত জিংক এবং ভিটামিন ই রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম।
আবার এই বীজে উপস্থিত ভিটামিন বি৬ আপনার চুল পরা বন্ধ করে।
আকারে ছোট হলেও এর কার্যক্ষমতা ব্যাপক। নিয়মিত নাস্তায় যক্ত করে নিলে এর অসাধারণ স্বাস্থ্যকর গুনাগুন আপনাকে আরো সুস্থ এবং প্রানবন্ত করে তুলবে।
You May Also Like: