শাক- সবজির গুনাগুন ও উপকারিতা
শাক সবজি দুটো নিরামিষ পদ। তবে আমাদের নিত্য আহারে একটি অপরিহার্য অংশ। একটি বেলা চলে না শাকসবজি ছাড়া। মূলত শাক-সবজির বেশি খাওয়া সুস্বাস্থ্যের প্রতীক হিসেবে মানা হয়।
আজ কিছু শাক – সবজির কথা তুলে ধরার চেস্টা করবো।
শাকের উপকারিতা ও গুনাগুন
১.পালং শাক (Spinach)
শাকের মধ্যে সবচেয়ে আয়রণ সমৃদ্ধ হল পালং শাক। এটি খেলে এতে রক্তে আয়রণের মাএা বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের যেকোন সমস্যায় পালং শাক বেশ উপকার। পালং শাকের রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই রয়েছ।
২.লালশাক (Red Spinach)
লালশাক ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। এই শাক রক্তে হিমোগ্লোবিন পরিমান বৃদ্ধি করে। তাই রক্ত স্বল্পতা ভোগা মানুষের জন্য বেশ উপযোগী এই শাক।
৩.কলমি শাক (Gourd Spinach)
প্রাকৃতিক ভাবে পেট পরিস্কার করে কলমি শাক। তাছাড়া প্রসূতি মায়ের জন্য বেশ পুষ্টিকর এই শাক। নিয়মিত এই শাক খেলে গর্বাবস্থায় মায়ের হাতে পায়ের পানি কমে যায়।
৪.কচুশাক (Arum Spinach)
আয়রণ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর। উচ্চ রক্তচাপ কমায় এই শাক।
৫.ডাটাশাক (Straw Spinach)
ডাটাশাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ফলিক এসিড রয়েছে। নিয়মিত ডাটা শাক খেলে ত্বক ও চুলের ক্ষয় রোধ করে। তাছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এ যা রাতকানা রোগ দূর করে।
সবজির উপকারিতা ও গুণাগুণ :
১.শসা (Cucumber):
এটি প্রোটিন পরিপাকে সহায়ক। কিডনি ও পাকস্থলী প্রদাহ নিরাময়ে ফলপ্রসূ। শসায় রয়েছে স্টেরল নামক একধরনের উপাদান, যা আপনার উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাছাড়া এরেপসিন নামক এনজাইম থাকায় হজমে বেশ সহয়তা করে শসা। শসার রস ডায়বেটিকদের জন্য বেশ উপকারী।
২. টমেটো (Tomato) :
এর গুণাগুণ সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রবাদ আছে দৈনিক একটা টমেটো খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। টমেটো কাঁচা পাকা রান্না করে অথবা সালাদ হিসাবে খাওয়া হয়। এতে প্রচুর ভিটামিন, লবন, অক্সালিক অ্যাসিড, পটাশ, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ বিদ্যমান। কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রচুর খনিজ সমৃদ্ধ সবজি। ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ।
৩. গাজর (Carrot):
গাজর অত্যন্ত পুষ্টিমান সম্পন্ন সবজি। কাঁচা এবং রান্না অথবা সালাদ হিসাবেও খাওয়া যায়। গাজরের হালুয়া ও পায়েস রান্নাও সুস্বাদু । ক্ষিধে বাড়ায়, অর্শ, পেটের অসুখ ভাল করে । মস্তিস্ক ও হার্টের জন্য হিতকর। তবে গাজর বেশী খেলে গর্ভপাত হতে পারে । এতে প্রচুর ক্যারোটিন ও ফসফরাস বিদ্যমান । এটি রাতকানা, ক্যান্সার ও ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন সমৃদ্ধ সবজি।
৪ . ফুলকপি (Cauliflower), পাতাকপি (Cabbage), ওলকপি (German Turnip):
ফুলকপি মায়েদের স্তনে দুধ বাড়ায়, বীর্যবর্ধক, কফ নাশ করে। তবে ঘনঘন খেলে বাতের ব্যথা বাড়তে পারে।
পাতাকপি বা বাঁধাকপি হার্টের জন্য ভাল। মুত্রবর্ধক, লিভারের জন্য হিতকর। আছে আয়োডিন, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘ই’। ওলকপি বা শালগম সুস্বাদু, পেট পরিস্কার করে। কৃমি ও কফ নাশক। তিন প্রকারের কপিতেই প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ,ক্যালশিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন ’এ’ বি’ সি’ রয়েছে।
৫. শিম (Bean):
অনেকে বলেন শিম গরম এবং হজমে দেরী করে । বিশেষজ্ঞরা বলেন, রান্নার সময় রসুন ফোড়ন দিলে হজমে কোন অসুবিধা হয় না। শিম বলদায়ক, বায়ু ও পিত্ত নাশক। শিমের বীচিতে প্রচুর আমিষ আছে শিমে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও আয়রন থাকে।
৬. করোলা (bitter gourd):
করোলা স্বাদে তিক্ত হলেও অত্যন্ত উপকারী । তিক্ততাই এর গুন । করোলা কাটার আগে ধূয়ে নিতে হয়। কাটার পরধুলে গুন নষ্ট হয়ে যায় । করোলা বায়ু, পিত্ত ও কফ ত্রিদোষনাশক । ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা মহৌষধ। করোলা পেট পরিস্কার করে, রক্ত পরিস্কার করে, ক্ষিদে বাড়ায় এবং কৃমি নাশক ।
৭. বেগুন (Brinjal):
বেগুন নানাগুনে সমৃদ্ধ। বেগুনে মুত্রকৃচ্ছতা ভালো হয়, লিভার ভাল রাখে, কিডনিতে পাথর হলে বেগুন খেলে তা প্রস্রাবের সাথে বের হযে যায়। অর্শ রোগে বেগুন উপকারী। মেদ কমায, ক্ষুধা বাড়ায়, মেয়েদের মাসিক নিয়ন্ত্রন করে। এতে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন ও আয়রন আছে ।
৮. পটল (pointed gourd):
তাজা পটল হজমশক্তি বাড়ায়। কাশি, জ্বর, রক্ত পরিশোধিত করে । হার্টের শক্তি বৃদ্ধি, পিত্তজ্বর,কৃমি সাড়ায় এবং শরীর ঠান্ডা রাখে। ওজন কমাতে ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এমনকি ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে পটল।
শাক – সবজি সর্ম্পূন প্রাকৃতিক ভাবে দেহের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। নিয়মিত শাক-সবজি গ্রহনে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
You May Also Like:
নিম পাউডার এর ৯ টি গুনাগুন ও উপকারিতা
সূর্যমুখী বীজের শীর্ষ 10 স্বাস্থ্য উপকারিতা
অ্যাভোকাডোর আশ্চর্যজনক গুণ যা অবশ্যই কাজ করবে