চালের উপকারিতা ও গুনাগুন
চাল একটি শস্যদানা যা আমরা ধান থেকে পেয়ে। ফলনশীল শস্যের মধ্যে ধান সবচেয়ে বেশি ফলানো হয় আমাদের দেশে। প্রতিদিনকার আহারে জনপ্রতি মানুষের ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ভাত প্রয়োজন হয়। তাহলে তিন বেলার হিসেব দাড়াছে আরো দ্বিগুণ।
পেট ও মন দুটোই ভরে ভাত খাওয়ার মাধ্যম এ। চাল থেকে রান্না করা ভাত আমাদের প্রতিদিন খাবারের একটি অতি প্রয়োজনীয় অংশ। ভাত ছাড়া বাঙালির চলেই না।
আর ভাত বলতে আমরা সিদ্ধ চালের ভাতকেই বুঝি। কুমিল্লা, এবং সিলেট বিভাগের মানুষজন ছাড়া সব বিভাগের মানুষ সিদ্ধ চালের ভাত খেয়ে থাকে। আতপ চাল সিদ্ধ চালের মতো ঝরঝরে নয়। আঠালো তবে সুস্বাদু এবং সুগন্ধি।
ভাত খাওয়ার জন্য আমরা মূলত সিদ্ধ চালকেই বেছে নিই। কারন ভাত ঝরঝর, চিকন এবং দেখতে ধবধবে সাদা। মূলত এখানে আমরা চোখের গুরুত্বকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় পুষ্টিকে নয়। কারণ চালের পুষ্টিগুন বিচারে আতপ চালের ভাত সিদ্ধ চালের ভাত থেকে কয়েক গুন বেশি উপকারী।
চালের পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম সিদ্ধ চালের ভাত থেকে আপনি পাবেন
- ১২৩ গ্রাম ক্যালরি,
- ২৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট,
- ১ গ্রাম ফ্যাট, এবং
- প্রোটিন ৩ গ্রাম।
অন্যদিকে আতপ চালের ১০০ গ্রাম থেকে পাচ্ছেন
- ১৪০ গ্রাম ক্যালরি,
- ৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট,
- ২ গ্রাম ফ্যাট এবং
- প্রোটিন ৫ গ্রাম।
সুতরাং বলা আতপ চালে সিদ্ধ চালের তুলনায় পুষ্টিগুন বেশি।
তাছাড়া অন্য দিক থেকেও আতপ চাল এগিয়ে সিদ্ধ চালের চেয়ে। আতপ চাল ধান অবস্থায় অর্ধ সিদ্ধ করা হয় এবং এতে সকল পুষ্ঠিগুন ঠিক থাকে।
কিন্তু সিদ্ধ চাল পানিতে দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে রাখা হয় এবং সিদ্ধু করার ফলে পুষ্টিগুন অনেকাংশে কমে যায়।তাছাড়া বেঁচে যাওয়া পুষ্ঠিগুনের রান্নার সময় মাড় হিসেবে ফেলে দেয়া পানীয় অংশের সাথে ১৫ শতাংশ পুষ্টিগুন চলে যাওয়া ড্রেনে।
স্বাস্থ্যের জন্য আতপ চাল ভালো। এতে কম রাসায়নিক পদার্থ মিশানো হয় বাজারজাতকরন করার জন্য। অপরদিকে সিদ্ধ চালকে আরো আর্কষনীয় করে তুলতে রাসায়নিক অনেক পর্দাথ মিশানো হয়।
যেমন চাল কেটে চিকন করা, ঔষধ মিশানো হয় পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করা জন্য। সবশেষে মম দেয়া হয় চকচকে ভাব আনার জন্য।
হজমের ক্ষেত্রে আতপ চাল ভালো এবং সুস্বাদু। অল্পতেই আপনার পেট ভরে যায়। সিদ্ধ চাল স্বাদহীন এবং পরিমানে লাগে বেশি। তবে বর্তমান সময়ে সিদ্ধ চালের ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রনের ফলে উপকারিতা শুন্যের কোঠায়।
এবার আসি লাল চাল আর সাদা চালের কথায়।
লাল চাল ও সাদা চাল
লাল চাল বলতে আমরা বাদামি চালকেই বুঝি। কলে বা ঢেঁকি ছাটা চাল।পুষ্টিগুন বিচারে লাল চাল ভাল। কারন এতে উচ্চ মানের ফাইবার।প্রতি গ্রাম লাল চালের ভাত থেকে পাওয়া যায় ৩০ গ্রাম ফাইবারস।
আমাদের শরীরে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল কমাতে সাহায্য করে লাল চাল। শরীরে থাকা টক্সিনের মাএা কমায় লাল চাল।ডায়াবেটিকদের জন্য লাল চালের ভাত ভাল বিশেষত যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটি । কারন এতে রয়েছে উচ্চ মানের ম্যাগনেশিয়াম যা আপনার সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
অন্যদিকে সাদা চালের ভাতে উল্টো ডায়াবেটিসের মাএা বাড়িয়ে দেয় সুগার লেভেল । তাছাড়া লাল চালে রয়েছে glycemic index কম মাএায় ।এ উপাদানটির কাজ হচ্ছে আপনার শরীরের সুগার লেভেল তৈরি করা দ্রুতার সাথ। লাল চালে এর মাএা ৫০ শতাংশ। আর সাদা চালে ৮৯ শতাংশ।
সুতরাং-বলা যায় যদি পুষ্টিগুন বিচারে লাল বা বাদামি চাল এগিয়ে সব চালের থেকে।এখন সিদ্ধান্ত আপনার মুখের স্বাদের দাম দিবেন নাকি শরীরের পুষ্টির।