রূপচর্চায় অশ্বগন্ধার ব্যাবহার
আর্য়ুরবেদ চিকিৎসা শাস্ত্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদানের নাম অশ্বগন্ধা। এর ঔষধি গুনের জন্য একে “আয়ূরবেদের রানী” বলা হয়। মূলত এর জন্মস্থল ভারত। তবে নেপাল, চীন এবং ইয়েমেনেও বর্তমানে বাণিজিক ভাবে চাষ করা হচ্ছে। ইংরেজিতে এর নাম হচ্ছে “Withania Somnifera” or Winter Cherry. একে এই উপমহাদেশের জিনসেং বলা হয়।
এই দ্বিতীয় শব্দটি ল্যাতিন ভাষা থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ ঘুম। আর অশ্বগন্ধা নামটির অর্থও বেশ মজার। শক্তি শব্দটি থেকে অশ্ব শব্দটি এসেছে যার অর্থ ঘোড়া। আর গন্ধা অর্থ কোন কিছুর গন্ধ।
মূল বিষয়টি দাড়াছে এই গাছের শিকরে যা শক্তি আছে তা ঘোড়ার মতো দূরন্ত। আর এর পাতা নিয়ে হাতে একটু পিষলে ঘোড়ার শরীরের ন্যায় গন্ধ পাওয়া যায়।
অশ্বগন্ধার ব্যবহার
অশ্বগন্ধা মূল বা শিকড়কে আমরা পাউডার হিসেবে ব্যবহার করছি বর্তমানে। এর ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয় শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধানে। যেমন অশ্বগন্ধার পাতা নিয়মিত সেবনে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন করে এবং শরীর অতিরিক্ত মোটা হতে বাধা প্রদান করে।
প্রাচীন কালে মধু বা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে অশ্বগন্ধা খেতেন সে কালের পুরুষ ও নারী সবাই। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের এই অশ্বগন্ধার গুনের কথা বেশ জোরালো ভাবে বলা হয়েছে। প্রায় সকল রোগেরই সমাধান মিলে এই অশ্বগন্ধায়। বর্তমান সময়েও অশ্বগন্ধার ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। বিজ্ঞানের ক্যালনে আরও আধুনিভাবে অশ্বগন্ধার ব্যবহার বেড়েছে।
রূপচর্চায় অশ্বগন্ধার ব্যবহার
প্রাচীন আয়ূরবেদ শাস্ত্রে অশ্বগন্ধার ভেষজ গুনাবলির প্রায় প্রতিটি রোগের জন্য ঔষধ হিসেবে মুনী-ঋষিগন অশ্বগন্ধা ব্যবহার করতেন। রূপচর্চার ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক। অশ্বগন্ধার মূলের পাউডারকে বিভিন্ন ফেসপ্যাকের সাথে ব্যবহার করা হতো। চুলের যত্নে ও অসাধারন কার্যকরি এই অশ্বগন্ধা।
ত্বকের যত্নে অশ্বগন্ধার ব্যাবহার
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এর ভূমিকা অপরিসীম। কারণ এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রোপার্টিজ রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাথে চেহারায় বয়সের ছাপ বা বলিরেখা দূর করে।
শুস্ক ত্বকের মূল সমস্যা হচ্ছে কোমলতা বা মশ্চারাইজারের অভাব। অশ্বগন্ধা নিয়মিত সেবনে ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধি পায়। কারন অশ্বগন্ধা মশ্চারাইজার সমৃদ্ধ। আয়ূর্বেদ শাস্ত্রে ত্বকের শুস্কতাসহ, পোড়া, কাটা ছেড়ায় অশ্বগন্ধা পাউডার ব্যবহার করা হতো। বর্তমান সময়ে আয়ূর্বেদ প্রসাধনীতে বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের যেকোন প্রসাধনীতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়। কারন ত্বককে নিরাময় করার শক্তি অশ্বগন্ধায় প্রচুর।
ত্বকের টোনার হিসেবে অশ্বগন্ধার ব্যাবহার দারুন ভাবে কাজ করে। সামান্য লেবুর রস, শুকনো আদা গুড়া এবং অশ্বগন্ধা পাউডারের সংমিশ্রণে এই অসাধারণ টোনারটি বহু প্রাচীন পদ্ধতি রূপচর্চার যা এখনও বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া ত্বককে হাইড্রেট করে অশ্বগন্ধা। কারণ এতে থাকা হায়ালিওরনান (hyaluronan) ত্বকের টিস্যুগুলোর মধ্যে পানির সরবরাহ বৃদ্ধি করে। ফলে ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে দীর্ঘক্ষণ। বর্তমানে প্রায় আমরা এই সমস্যায় পড়ে থাকি ত্বকের কোমলতা ধরে রাখা নিয়ে। অশ্বগন্ধা সেই কাজটি সুক্ষ ভাবে কাজটি করে থাকে। কোলাজেন ও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। এই কোলাজেনের পরিমান অশ্বগন্ধায় ভরপূর।
চুলের যত্নে অশ্বগন্ধার ব্যাবহার
চুলের যত্নে অশ্বগন্ধার ব্যাবহার করলে পাবেন জাদুকরী উপকার। মাথার ত্বকের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করার মাধ্যমে চুলের গোড়া মজবুত করে। স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য ফলিসেল গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা অশ্বগন্ধায় ভরপুর।
বর্তমানে আমাদের বড় সমস্যা চুল পড়া। অশ্বগন্ধা কিন্তু সুপার হেয়ার টনিক চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং হরমোন ব্যালেন্সসিং সিস্টেম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এখনকার আয়ূর্বেদীক শ্যাম্পু বা তেলে এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার দেখা যায়। আরও একটি সমস্যা আমরা প্রায় ভোগ করি চুলের ক্ষেএে এখন মাঝখান থেকে চুল ভেঙে পড়া। এর মূল কারণ হচ্ছে অম্যানো এসিড ও আয়রণের অভাব। অশ্বগন্ধা আপনাকে এই সকল সমস্যা থেকে অনেকটায় নিস্তার দিবে।
সুতরাং বলা যায়, অশ্বগন্ধার ব্যবহার সর্বোপরি শরীরের সাথে সাথে রূপচর্চাও অনেক ভূমিকা রাখে।